শুধু বাংলাদেশের ইতিহাস নয়, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু করে এ অঞ্চলে সারাজীবন মওলানা ভাসানী রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ছিলেন।
জানা যায় একবার এক সভা আরম্ভ হবার সাথে সাথেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পুলিশ এসে আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে ১৪৪ ধারা জারির চিঠি ধরিয়ে দিলে, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী দাঁড়িয়ে বললেন- “১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। আমাদের সভা করতে দেবে না। আমি বক্তৃতা করতে চাই না, তবে আসুন, আপনারা মোনাজাত করুন। আল্লাহু আমিন।”
মওলানা ভাসানী মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় আধঘন্টা মোনাজাত করলেন, সেই মোনাজাতে কোনোকিছুই বাদ রাখেননি তিনি, যা বলার সবই বলে ফেললেন।
পুলিশ অফিসার ও সেপাইরা হাত তুলে মোনাজাতে শরীক হলেন। আধঘন্টা মোনাজাতে পুরো বক্তৃতা করে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সভা শেষ করলেন। পুলিশ ও মুসলিমলীগ নেতাকর্মীরা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেলেন।
১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানের জনসভায় মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্দেশে পবিত্র কোরআনের সুরা ‘কাফেরুন’ থেকে আয়াত উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘লাকুম দীনুকুম ওয়া লিয়া দীন’ ‘তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম আর আমাদের জন্য আমাদের ধর্ম)। অর্থাৎ তোমার রাস্তায় তুমি যাও, আমাকে আমার রাস্তায় চলতে দাও। এটা ছিল সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা। এর ভিত্তিতেই মওলানা ভাসানীর ন্যাপ ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন বর্জন করেছিল।
১৯৭১ সালের ৩ মার্চ থেকে অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে আরও একবার স্বাধীনতার আহ্বানমুখে সোচ্চার হয়েছিলেন মওলানা ভাসানী। ৪ মার্চ এক বিবৃতিতে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন। ৯ মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি ২৫ মার্চের মধ্যে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যার অভিযান শুরু হয়েছিল। ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সন্তোষে মওলানা ভাসানীর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তিনি আসামের ফুলবাড়ি হয়ে ১৫ এপ্রিল ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে ভারতবিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিতি থাকায় ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস সরকার তাকে অঘোষিতভাবে নজরবন্দি অবস্থায় রেখেছিল। কিন্তু নিজের স্বাধীনতা হারিয়েও মওলানা ভাসানী দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে একজন প্রধান দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতার ভূমিকা পালন করেছিলেন।
সেই মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। উনার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আমিন।
-এম. এ. বাকী বিল্লাহ
লেখক, সংগঠক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
মন্তব্য করুন