ময়মনসিংহ: সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ইং (চেতনা ২৪ নিউজ) ময়মনসিংহের টাউন হল তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন।
১৬ ডিসেম্বর সোমবার আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক জনাব মফিদুল আলম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার আজিজুল ইসলাম । ডি আই জি ড.আশরাফুর রহমান ।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ সহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ।
আলোচনা সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন আহমেদ স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্যে বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাদের সাথে মুখোমুখি সম্মুখ যুদ্ধে আমার আপন ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছে।
হালুয়াঘাট অঞ্চলে আমিও সম্মুখ যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলাম। বাংলাদেশ স্বাধীন হতে এত রক্ত ঝরাতে হতো না যদি মুজিব তখন পাকিস্তানিদের সাথে হাত না মিলাতো।
পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে সে সময় মাত্র ১০ হাজার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অবস্থান করছিলো। শেখ মুজিব সেই ১০ হাজার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের কে ভাই বলে সম্বোধন করে বুকে টেনে নিয়েছিল এবং তাদেরকে সুযোগ দিয়েছিল পাকিস্তান থেকে আরও সেনাবাহিনী যেন এ দেশে এসে তাদের ঘাঁটি মজবুত করতে পারে।
সে সময় শেখ মুজিব যদি পাকিস্তানিদের সাথে হাত না মিলাতো তাহলে বাঙালিরা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হলেও সেই ১০ হাজার সেনাবাহিনীকে সমূলে রুখে দিতে পারতো এবং বিনা রক্তপাতে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যেত।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শামস্উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বাংলাদেশে অভাব অনটন খাদ্য সংকট দেখা দেয় নি। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে শেখ মুজিব ক্ষমতায় আসার পরে বাংলাদেশে চরম দুর্ভিক্ষ নেমে আসে এর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে শেখ মুজিবের স্বৈরতন্ত্রী মনোভাব।
দেশ স্বাধীন হবার পরেও আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যারা হাতে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছি তারা শান্তিতে বসবাস করতে পারিনি । প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে শেখ মুজিব ও তার সহচরেরা রাজাকার বানিয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল।
কষ্টের কথা কি বলবো আমি মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে আমাদের দেশে দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীদের কে হত্যা করা হয়েছে দেশপ্রেমিক বিডিআরদের কে হত্যা করা হয়েছে । আমার দেশের মুন্সী মাওলানা দের কে আলেম-ওলামাদেরকে ঢাকার রাজপথে লাইট বন্ধ করে কুকুরের মত গুলি করে, জবাই করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে আয়না ঘর সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ২৪ এর যুদ্ধারা দেশকে নতুনভাবে স্বাধীন করেছে।পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আমার উদত্ত আহবান থাকবে যেন আপনারা দেশটাকে নতুন করে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করেন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ বলেন, ময়মনসিংহে যে সকল বদ্ধভূমিতে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে তা অতি শীঘ্রই অধিগ্রহণ করা হবে এবং বেআইনিভাবে বধ্যভূমির জায়গা দখল করার কারণে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে ও বধ্যভূমির সমস্ত জায়গা বধ্যভূমির জন্যই নির্ধারণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আপনারা বীর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদেরকে আপনাদের অভিজ্ঞতা ও সাহস দিয়ে সহযোগিতা করবেন যেন ভারতীয় আগ্রাসন আমাদেরকে গ্রাস করতে না পারে এবং আমরা যেন ভারতীয় আগ্রাসনের নাগপাশকে ছিন্ন করে দিতে পারি।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মফিদুল আলম বলেন, আমরা ১৯৬১ সালের বর্বরতা চোখে দেখিনি কিন্তু ২৪ এর বর্বরতা দেখেছি। নিরীহ মানুষের উপর ১৯৭১ সালে করা অত্যাচার দেখিনি কিন্তু ২৪ সালে নিরীহ মানুষের উপর করা অত্যাচার দেখেছি। মানুষের বাক স্বাধীনতাকে কিভাবে হরণ করতে হয় তা আমরা বিগত ১৭ বছরে এ দেখেছি।
তিনি আরো বলেন, ৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধারা কিভাবে প্রাণ দিয়েছে তা আমরা ২৪ এ সচক্ষে দেখেছি । আমাদের শহীদ মুগ্ধ , শহীদ আবু সাঈদের মত বীরদের দেখেছি যাদের প্রাণের বিনিময়ে স্বৈরাচারী শাসক পালাতে বাধ্য হয়েছে। শহীদ পরিবারদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা যে স্পিরিট নিয়ে এদেশ নতুন করে স্বাধীন করেছেন সেই স্পিরিট নিয়ে আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন।
অতঃপর ৭জন মুক্তিযোদ্ধা কে সম্মাননা স্মারক প্রদান করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক ।
মন্তব্য করুন