"ওরা কেউ নেই’’ (-ফারিয়া ইসলাম)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম [ ﷽ ]
১০:৫০ এম, বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫, ৪ আষাঢ়, ১৪৩২, ২১ জিলহজ, ১৪৪৬
১০:৫০ এম, বুধবার,
১৮ জুন, ২০২৫,
৪ আষাঢ়, ১৪৩২,
২১ জিলহজ, ১৪৪৬
শিরোনামঃ
সংবাদকর্মী আবশ্যকঃ
জরুরী সংবাদকর্মী আবশ্যক- জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পেপার (চেতনা ২৪ নিউজ) এ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, থানা, বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাস পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। Gmail 1:- chetona24news@gmail.com আগ্রহী প্রার্থীগণ মেইলের মাধ্যমে সিভি জমা দিন। জরুরী সংবাদকর্মী আবশ্যক- জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পেপার (চেতনা ২৪ নিউজ) এ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, থানা, বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাস পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। Gmail 2:- add.chetona24news@gmail.com আগ্রহী প্রার্থীগণ মেইলের মাধ্যমে সিভি জমা দিন। জরুরী সংবাদকর্মী আবশ্যক- জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পেপার (চেতনা ২৪ নিউজ) এ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, থানা, বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাস পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। Gmail 3:- c24n.news@gmail.com আগ্রহী প্রার্থীগণ মেইলের মাধ্যমে সিভি জমা দিন।

“ওরা কেউ নেই’’ (-ফারিয়া ইসলাম)

মতিউর রহমান ভৈরব ও কুলিয়ারচর প্রতিনিধি  চেতনা ২৪ নিউজ ।। আপডেটঃ ১১:২১ পিএম, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ৬৮ বার পড়া হয়েছে

কিশোরগঞ্জ: বুধবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ইং (চেতনা ২৪ নিউজ)

 

ওরা কেউ নেই’’

                              -ফারিয়া ইসলাম

         বাড়ির বড় আম গাছটার নিচে বসে খেলা করছিলেন ৫ বছরের ছোট্ট নিয়তি। তার মিষ্টি মুখের বুলিতে কি যেন বিরবির করে একটা ছড়া কাটছিল। “অসুররা চলে যাবে, তবে একদিন স্বাধীন হবে।” সারা বাড়ির মানুষের মধ্যে কি যেন একটা হাহাকার। মুখ দিয়ে কারো কোনো কথা নেই, হাসির কোনো রেশ নেই, তবে সবার চিন্তা যেন একই সূত্রে গাঁথা। মাথায় হাত দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। নিয়তি খেলা রেখে কমলার কাছে যায়। “কমলা বুবু, ও কমলা বুবু?” নিয়তির ডাকে হঠাৎ নড়ে সরে বসে গভীর চিন্তায় মগ্নে থাকা কমলা বানু। কমলা বানু নিয়তির বড় বোন। আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা কমলা বানু গম্ভীর দৃষ্টিতে সাড়াদিন চেয়ে থাকে আজবপুরের শেষ মাথার ঐ নৌকা ঘাট টার দিকে। কারণ স্বামী রহিম আর ছোট ভাই সানুকে ঐ ঘাটের পাড়েই শেষ বিদায় দিয়েছিল তারা। সানু ১৩ বছরের ঢ্যাঙা জোয়ান ছেলে। যাওয়ার সময় মা জমিলাকে একটা কথাই বলছিলো সানু। “তুমি চিন্তা করোনা মা, তুমার ছেলে দেশের এই অবস্থায় কাপুরুষের মতো বসে থাকতে পারে না।” জমিলা একজন দেশ প্রেমিক নারী। আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলছিলেন, “হু বাজান, দেশের জন্য শুধু পিঠে নই, প্রয়োজনে বুক পেতে গুলি নিবে। তবু অসুরদের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমি রক্ষা করতেই হবে।” কথাগুলো বলার সময় মনে হচ্ছিল জমিলা বানুর চোখ দিয়ে কেমন আগুনের স্ফুলিঙ্গ জ্বলছে, হাতগুলো ভূমিকম্পের মতো কাঁপছে, জমিলা বানুকে তখন একজন জমিলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ দেখাচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিল যেন বাংলার হাজার হাজার বীরাঙ্গনা একসাথে চিৎকার দিয়ে বলছিল, “অসুরদেরকে এই দেশ থেকে হঠাতে হবেই।”

প্রবল বর্ষা! নদী-নালায় পানি তৈ তৈ করছে। কয়েকদিন যাবত গোলা বারতের শব্দ ও তেমন একটা শুনা যায় না। যুদ্ধ কি তাহলে শেষ? এবার বুঝি রহিম আর সানু বাড়িতে ফিরবে? কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আবার গম্ভীর হয়ে যায় কমলা বানু। কারণ আবেদ চাচা সেদিন বলছিলেন পাকিস্তানি মিলিটারিরা নাকি পানি ভয় পায়। তাহলে বুঝি পানির ভয়ে ওরা হিংস্রতার রূপ একটু বন্ধ রাখল?

 

মাঝরাতে একদল মুক্তিবাহিনী এসে তথ্য দিয়ে গেল যে পাকবাহিনীরা নাকি টার্গেট করেছে কাল সকালের দিকে আজবপুরের বাজারটা পুড়ে ফেলবে। সেই সাথে বাড়ি গুলোতেও আগুন দিবে। কথাগুলো শুনেই সবার মাঝে আতঙ্কের ঝড় শুরু হয়ে গেল। সবাই যার যার মতো করে গাট্টি বুচকা নিয়ে পালাতে লাগল। কেউ জঙ্গলের দিকে আবার কেউ নৌকা দিয়ে পারি দিল অজানার উদ্দেশ্যে। তাদের কারোরই জানা নেই তাদের গন্তব্য কোথায়! কোথায় গিয়ে তাদের যাত্রা শেষ হবে! ঘন্টা ক’য়েকের মধ্যে সমস্ত গ্রাম নিস্তব্ধ হয়ে গেল। বাড়ির পেছনের ডোবা থেকে একটা ব্যাঙের শব্দ আসছে আর মিনুদের গোয়ালঘর থেকে ভেসে আসছে হাড় বেরিয়ে যাওয়া রুগ্ন গাভীটির ডাক। একটু পর পর ডাকছে তার চেনা সেই করুন কন্ঠে, হাম্বা,,,,হাম্বা,,। হয়তো নীরিহ এই প্রাণীটি ভাবছে চেনা এই মানুষ গুলো কোথায় যাচ্ছে? আমাকে কেন সাথে নিচ্ছে না? কিন্তু এই অবলা প্রাণীটি কি আর জানে যে নিজেদের জীবন বাঁচানোই আজ আশঙ্কা হয়ে দাড়িয়েছে তাদের মধ্যে! নৌকা গুলোর মিট মিট আলো হালকা ভেসে আসছে। মানুষগুলো হয়তো অনেক দূরে চলে গেছে। অনেক অনেক দূরে। নিয়তিরা কিন্তু বাড়িতেই রয়ে গেলো। জমিলা বানু ভাবছেন অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে কমলাকে নিয়ে এতো রাতে কোথায় যাবেন সে? তাই কাল সকালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।,,,,,,,,,,,,

 

ভোর থেকে কমলার পেটে মৃদু ব্যাথা শুরু হলো। তাই বাড়ি ছেড়ে কোথাও আর যাওয়া হয়নি। মেয়েকে এমন পরিস্থিতিতে রেখে পৃথিবীর কোন মা যাবে? শেষ নৌকা দিয়ে যখন করিম চাচাদের পরিবার চলে যাচ্ছিলো, জমিলা বেগম ছোট্ট নিয়তিকে নৌকা ঘাটে পৌছে দিয়েছিল তাদের সাথে। যতো দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিলো, আপন মনে চেয়ে চোখের পানি ফেলছিল একে অপরে।

 

বাড়িতে ঢুকতেই জমিলা বানু দেখতে পেলেন পাশের বাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ভয়ে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না। তিনি কমলা বানুকে নিয়ে পালাতে যাবেন, ওই মুহূর্তে বাড়িতে দ্রুত গতিতে পা রাখলো এক দল মিলিটারি। দেখতে দানবের মতো। সবার সামনের দিকে কুদ্দুস আলী রাজার । উর্দুতে বলছিল, ” জানাব ইয়ে ও ওরাত হে জিসকা দামাত মুক্তিবাহিনী ছে হে।” এদের মধ্যে একজন জমিলা বানুর চুলের মুঠি ধরে উর্দুতে বলছিল, “বাতা তেরা বেটা ওর দামাত কাহা হে?” জমিলা বানু কর্কশ সুরে শুধু বলছিলেন, “জানিনা”। পাশেই থর থর করে কাপছিলেন কমলা। কুদ্দুস আলী আবার বাংলায় জিজ্ঞেস করছিলো, ” বল তোর ছেলে আর জামাতা কোথায়?” আবারোনএকই শব্দ “জানি নাহ”। সাথে সাথে বিরামহীন গুলি ছুঁড়ে দেয় দুজনের বুকের উপর। ওদের রক্তে ভেসে গেল পুরো উঠান। এ যেন এক রক্তের সাগর। মৃত্যুর শেষ পর্যায়ে এসেও জমিলা বানুর মুখে একই শব্দ। ” ওরে সানু, বাবা আমার,, প্রয়োজনে বুকে গুলি খাবি, তবু দেশকে স্বাধীন করবি।” এই ভয়ঙ্কর দিনটিতে অসুরেরা অনেক মানুষকে মেরে ফেলেছিল। পাশের গ্রামে অনেক লগুলো মানুষ জীবন বাঁচাতে বিরাট এক গর্ত করে তার উপর টিন আর লতাপাতা দিয়ে ঢেকে ভিতরে লুকিয়েছিলেন। জরুরি কাজে কেউ একজন বাহিরে বের হতে যাচ্ছিলো, এই মুহুর্তে ধরা পরে যায় মিলিটারির হাতে। মুহুর্তের মধ্যে সবগুলো প্রাণ নিয়ে নিল। পুরো গর্ত সাথে সাথে এক ভয়ঙ্কর রক্তার্ত বন্যায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল।

” তারপর? নিয়তি, সানু, রহিম ওরা কি বেঁচে ছিল? ” আমি জানতে চাইলাম সেই প্রতীকি ছোট্ট শিশুর কাছ থেকে। আমার এই প্রশ্নে মেয়েটি কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে রইলো। হঠাৎ উচ্চস্বরে বলছিল রহিম,সানু কেউ বেঁচে নেই। কেউ না, আমিও না! হঠাৎ আমার সমস্ত শরীর শিউরে ওঠল। “মানে কী?”, আমি আমতা আমতা করে জিগ্যেস করলাম। এতোক্ষণে খেয়াল শুধু আমি ছাড়া নদীর কাছের ঐ পুরোনো আম গাছটার নিচে কেউই নেই! তাহলে আমি কার সাথে কথা বললাম এতোক্ষণ? এই মেয়েটি আসলে কে? মেয়েটি কি তাহলে ছোট্ট শিশু নিয়তি ছিলো? ওর ছোট্ট প্রানটাও কী রক্ষা পায়নি? এতোটাই নিষ্ঠুর ছিল এই যুদ্ধ? নিয়তি কেন এখনো ঘুরে বেড়ায় এই বাংলার মাঝে ? হয়তো সে ও জানে আজ স্বাধীনতার এতো বছর পরও আমার দেশ ভালো নেই। অন্য দেশ থেকে রক্ষা পেলেও নিজের রক্তের সাথেই হচ্ছে আজ বেইমানি। কাকে মেরে কে খাবে চলছে সেই প্রতিযোগিতা। দেশের এই পরিস্থিতি দেখে হয়তো নিয়তির মতো হাজারো নিয়তিদেরও কষ্ট হয়! তাই হয়তো তারা আত্মা রুপে ঘুরে বেড়ায় দেশের আনাচে কানাচে!

 

লেখক -ফারিয়া ইসলাম

জিল্লুর রহমান সরকারি মহিলা কলেজ

ভৈরব, কিশোরগঞ্জ

ইংরেজি বিভাগ

শিক্ষাবর্ষ: ২০২২-২৩

 

 

মন্তব্য করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেতনা 24 নিউজ

আপলোডকারীর সব সংবাদ
শিরোনামঃ