ময়মনসিংহ নগররের এক ডাক্তারের গাড়িচালককে অস্ত্রের (চাকু) মুখে তুলে নিয়ে ঘরে আটকে রেখে টাকা আদায় করা ও ভাড়াটে নারীদের দিয়ে তার সঙ্গে জোর করে ছবি তুলে জিম্মি করে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বুধবার কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে চক্রটির দুজন সদস্যকে পূর্বের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ।
পুলিশ বলেছে, নির্দিষ্ট কাউকে নিশানা করে নানা কৌশলে তুলে নিয়ে ঘরে আটকে মারধর করে ও বিবস্ত্র করে এবং অপহরণকারীরা তাদের ভাড়া করে আনা নারীর সঙ্গে ভুক্তভোগীর নগ্ন ছবি তুলে মুক্তিপণ আদায় করে যাচ্ছিলো এই চক্রটির সদস্যরা।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন নগরের আকুয়া বোর্ড ঘর এলাকার মো. পাপ্পু (৩৫) ও একই এলাকার মৃত আবদুল জলিলের ছেলে ফরহাদ আহমেদ (২৫)।
আকুয়া গরু খোঁয়াড় মোড় এলাকা থেকে গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে অপহরণকারী চক্রের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, নগরের চরকালীবাড়ি এলাকার নূর মোহাম্মদের ছেলে স্বপন মিয়া (২৯) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত একজন চিকিৎসকের প্রাইভেট কারের চালক। গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার মাসকান্দা এলাকায় প্রাইভেট কারটি একটি গ্যারেজে রেখে বের হচ্ছিলেন। এমন সময় ১০–১২ জনের একটি দল স্বপনকে ঘিরে ধরে। দুজন স্বপন মিয়ার দুই পাশে চাকু ঠেকিয়ে সোজা হেঁটে যেতে বলে। এরপর তাঁকে একটি টমটম গাড়িতে তুলে আকুয়া গরু খোঁয়াড় মোড় এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীর বরাতে পুলিশ জানায়, গাড়িতে স্বপনের সঙ্গে চালকসহ ছয়জন উঠেছিল। গরু খোঁয়াড় মোড় এলাকার বাসার একটি কক্ষে নিয়ে স্বপনকে মারধর করে সেখানে এক নারীকে আনা হয়। এরপর স্বপনকে বিবস্ত্র করে ওই নারীর সঙ্গে ছবি তুলে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণের জন্য চলতে থাকে মারধর। একপর্যায়ে তিনি স্ত্রীকে ফোন করে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা দেন। এরপর ছেড়ে দেওয়া হয় স্বপন মিয়াকে। সোমবার রাত ৯টার দিকে গরু খোঁয়াড় মোড় থেকে একটি রিকশায় করে মাসকান্দা এলাকায় নিয়ে রেখে আসা হয় স্বপনকে।
ওই ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার পুলিশের কাছে অভিযোগ দেন স্বপন মিয়া। কোতোয়ালি মডেল থানায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনের কথা উল্লেখ করেন। অভিযোগটি আজ বুধবার মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে পুলিশ গতকাল বিকেল থেকে স্বপন মিয়াকে নিয়ে সম্ভাব্য স্থানগুলোতে অভিযান চালাতে শুরু করে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে শনাক্ত করা হয় পাপ্পু ও ফরহাদকে। পরে তাঁদের আটক করে পুলিশ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্বপন মিয়া বলেন, ‘গ্যারেজে গাড়ি রেখে বের হতেই চক্রটি অস্ত্র ঠেকিয়ে দেয়। নড়াচড়া করলে মেরে ফেলার হুমকি দিতে থাকে। অস্ত্রের মুখে তারা একটি গাড়িতে করে একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে মারধর করে ও নারীর সঙ্গে ছবি তুলে পরিবারের কাছ থেকে টাকা আনায়।’ তিনি বলেন, ‘চক্রটির কারও সঙ্গে আমার পূর্বে কোনো বিরোধ ছিল না, কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনিও না।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ময়মনসিংহ নগরের ৩ নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল হোসেন বলেন, ‘চাকু ধরে চালক স্বপন মিয়াকে তুলে নেওয়া হয়। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অপরাধী চক্রটিকে আমরা শনাক্ত করে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছি। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে তাদের টার্গেট করা ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে তাদের ভাড়াটে নারীকে একই ঘরে রেখে ছবি তুলে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করছিল।
পুলিশ জানায়, এই চক্রের অন্য সদস্যদেরও গ্রেপ্তারে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
মন্তব্য করুন