রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে ময়মনসিংহের ছাত্রদল কর্মী ইয়াসিন শেখ নিহত

ময়মনসিংহ:  শনিবার ৫ এপ্রিল ২০২৫ইং (চেতনা ২৪ নিউজ)   ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখোলার যুবক, ইয়াসিন শেখের স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। নানা চেষ্টায় তা নাহলেও সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় রাশিয়ায়। রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে অংশ নেন ইউক্রেন যুদ্ধে। ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় থেমে যায় তার স্বপ্নের যাত্রা।

ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ইয়াসিনসহ তার চার সহযোদ্ধার দেহ। গত ২৭ মার্চ ইউক্রেনে যুদ্ধরত অবস্থায় নিহত হন ইয়াসিন শেখ।

২৭ মার্চ ইয়াসিন নিহত হলেও পরিবার জানতে পারে ঈদের পরদিন। রাশিয়ায় থাকা ইয়াসিনের বন্ধু মেহেদীর মাধ্যমে ।

ইয়াসিনের মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পর পরিবারে চলছে শোকের মাতম ।

গৌরীপুরের ডৌহাখোলা গ্রামের মৃত ছত্তর মিয়ার ছোট ছেলে ইয়াসিন শেখ। চার ভাই-বোনের মধ্যে দুজন আগেই মারা গেছেন । মা আর বড় ভাইকে নিয়ে ছিল তার সংসার।

বড় ভাই ব্যবসায়ী রুহুল আমিন তার পড়াশোনা ও বিদেশযাত্রার খরচ বহন করেন।

রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার ছবি ও ভিডিও নিয়মিত তার ফেসবুকে আপলোড করতেন ইয়াসিন শেখ। গত ১ মার্চ ফেসবুকে তার বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে রাশিয়া যাওয়া, সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া এবং তার স্বপ্নপূরণ নিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করেন ইয়াসিন।

তখন ইয়াসিন এক ভিডিওবার্তায় জানিয়েছিল, গত বছরের জানুয়ারিতে সে রাশিয়ায় একটি চায়না কম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদন করেছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে অফার লেটার পেয়ে চলে যায় রাশিয়া।

মস্কো থেকে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার দূরের ওই কম্পানিতে তিন মাস চাকরির পর অনলাইনে আবেদন করে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক সৈনিক হিসেবে যোগ দেয়। দেশে না হলেও বিদেশে সৈনিক হয়ে বাবার স্বপ্নপূরণ হয় বলেও জানায় সে।

ওই ভিডিও বার্তায় আওয়ামীলীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিচারণ, ও তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের জন্যেও দোয়া প্রার্থনা করেন, ছাত্রদল কর্মী ইয়াসিন শেখ। সরকারিবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে তার সাহস হয়েছে, ও ইউক্রেনের যুদ্ধে যোগ দেওয়ার মনোবল তৈরি হয়েছে বলে জানায় সে। যুদ্ধে মৃত্যু হলেও তার কোনো আফসোস থাকবে না বলেও ভিডিওতে জানায় সে।

ওই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করার মাস না পেরুতেই যুদ্ধে ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় নিহত হয় ইয়াসিন।

ইয়াসিনের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম রবি জানান, রাশিয়ায় যাওয়ার জন্য ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে রাশিয়ান ভাষা শিখে ইয়াসিন। পরে বন্ধুর সহায়তার ইয়াসিন রাশিয়ায় একটি কম্পানিতে ভালো চাকরি পায়। সবই ঠিকঠাক মতো চলছিল। পরে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে সব উলটপালট হয়ে যায়।

তিনি বলেন, রাশিয়া সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার সময় ইয়াসিনের মা ও বড় ভাইকে গাড়িতে করে ঢাকায় নিয়ে অনাপত্তি পত্রে তাদের স্বাক্ষর নেয় ইয়াসিনকে রাশিয়া প্রেরণকারী এজেন্সির লোকজন। গত ২৬ মার্চ তার মায়ের সাথে শেষবারের মতো কথা বলে ইয়াসিন শেখ। কয়েকদিনের মধ্যেই ১০ লাখ টাকা পাঠাবে বলেও মাকে জানিয়েছিল সে।

নিহত ইয়াসিনের লাশের কী অবস্থা, লাশ দেশে আনা যাবে কি না তা নিয়ে কোনো তথ্যই পাচ্ছে না ইয়াসিনের পরিবার। ছেলের ছবি নিয়ে মায়ের কান্না থামছেই না। শোকে হতবিহ্বল পরিবারের সমস্যরা। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া ।