
ময়মনসিংহ: বৃহস্পতিবার ২ জানুয়ারি ২০২৫ইং (চেতনা ২৪ নিউজ) ময়মনসিংহে ইংরেজি নববর্ষের বছরের প্রথম দিন তিন কিশোর মানবিক কাজ করে নজির সৃষ্টি করেছে। অন্য আটদশজনের মতো থার্টি ফাস্ট নাইটে আতশবাজি ফাটিয়ে কিংবা ফানুস উড়িয়ে টাকা খরচ করে আনন্দ না করে নিজেদের জমানো অর্থ দিয়ে প্রায় একশ’ প্রতিবন্ধী ভাইবোনদের সাথে নিয়ে দুপুরের একবেলা খাবারের আয়োজন করেছে।

ছোট্ট বয়সে এমন মানবিক উদ্যোগে খুশি পরিবারের সদস্যসহ নাগরিক নেতৃবৃন্দ।
এমন তিন কিশোর হচ্ছে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ফিজিক্যাল বিভাগের প্রধান ডা. মো. আজিজুর রহমানের ৫ম শ্রেণী পড়ুয়া পুত্র রাইয়ান আজিজ, একই হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মানবেন্দ্র ভট্টাচার্যের পুত্র চিন্ময় ভট্টাচার্য ও মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোলাম রহমান ভূইয়ার ৪র্থ শ্রেণী পড়ুয়া পুত্র আরশান তানজিফ রেহাম।

এই তিন কিশোর বন্ধু বিদায়ী বছর ২০২৪ সালে একজোট হয়ে মানবিক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে। প্রত্যেকের নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে ক্লাবের নাম দেয় আরসিআর ক্লাব।
এই ক্লাবের মাধ্যমে বাবা-মায়ের দেয়া স্কুলের টিফিনের খাবারের টাকা বাঁচিয়ে জমাতে থাকে। এরই মধ্যে শেষ হয়ে আসে ২০২৪ সাল। থার্টি ফার্স্ট নাইটসহ নববর্ষের আনন্দকে সামনে রেখে তিন কিশোর বন্ধু পরিবারের সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে প্রতিবন্ধীদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্যই একবেলা খাবারের আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।
বুধবার পয়লা জানুয়ারি ময়মনসিংহ নগরীর কাঁচিঝুলিতে অবস্থিত প্রতিবন্ধী আত্ম উন্নয়ন সংস্থার প্রায় একশ প্রতিবন্ধীর জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়।

দুপুরে এই কিশোরেরা পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে প্রতিবন্ধীদের সাথে বসে দুপুরের খাবার খেয়েছে। তারা প্রতিবন্ধীদের মাঝে খাবার পরিবেশন করে খাবার কেমন হয়েছে তা জানতে চেয়েছে।
আয়োজক আরসিআর ক্লাবের উদ্যোক্তা রাইয়ান আজিজ জানায়, নববর্ষ আসলেই আমরা দেখতে পাই আমাদের সমবয়সী বন্ধু এবং বড় ভাইয়েরা আতশবাজি ফাটিয়ে, ফানুস উড়ানোসহ নানা আয়োজন করে টাকা খরচ করে আনন্দ করে থাকে। এই বিষয়টি আমরা তিন বন্ধু আলোচনা করে এ ধরনের আনন্দ না করে, প্রতিবন্ধীদের সাথে আনন্দ কিভাবে ভাগ করে নেয়া যায় এই জন্যই তাদের জন্য খাবারের আয়োজন করেছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের মানবিক উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে জানায় সে।
রাইয়ানের পিতা ডাক্তার মোঃ আজিজুর রহমান জানান, আমাদের বড়দের মাথা থেকে যে চিন্তাটা সচরাচর আসেনা কিন্তু এই ছোট্ট শিশুদের মন থেকে এমন মানবিক উদ্যোগে আমরা খুবই খুশি। এই তিন শিশু ভবিষ্যতে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের। কিশোরদের এমন উদ্যোগে খুশি প্রতিবন্ধী ভাই ও বোনেরা।
প্রতিবন্ধী আত্ম উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি আতাউর রহমান জুয়েল জানান, তিন কিশোরের এমন মানবিক উদ্যোগে নজির সৃষ্টি করেছে। থার্টি ফাস্ট নাইটে ময়মনসিংহ নগরীতে রাতে আতশবাজি ফাটিয়ে, ফানুস উড়িয়ে এবং গান বাজনার মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করেছে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। কিন্তু অল্প বয়সে এই তিন কিশোর প্রতিবন্ধীদের জন্য খাবারের আয়োজন করায় প্রতিবন্ধীরা খুবই খুশি। এমন মানবিক উদ্যোগে সবাই অংশ নেবে এমনটাই প্রত্যাশা।
ময়মনসিংহ জেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট এএইচএম খালেকুজ্জামান জানান, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় তিন কিশোরের এমন মানবিক উদ্যোগ একেবারেই ব্যতিক্রম। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে যদি এমন মানবিকতা ফিরে আসে তাহলে অসহায় গরিব দুঃখী প্রতিবন্ধীদের দুঃখ কষ্ট কমে আসবে । এই তিন কিশোরের কাছে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছুই আছে জানান তিনি।